বগুড়ার দই এত জনপ্রিয় হওয়ার কারন কি
প্রিয় পাঠক আশা করি ভাল আছেন আজকের আলোচনায় আমরা জানবো বাংলাদেশের বগুড়া জেলার দই কেন এত বিখ্যাত দেশজুড়ে কেন এত এই দইয়ের সুনাম রয়েছে।
দই একটি মুখরোচক খাবার। নারী-পুরুষ গরিব থেকে ধনী শিশু থেকে বৃদ্ধ দই খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু শহরের ঐতিহ্য নয় দই গ্রাম বাংলার মানুষের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিলাদ মাহফিলে অতিথি আপ্যায়নে দই না থাকলে কিছু একটা যেন অপূর্ণ থেকে যায় মনে হয়। কিন্তু কেন এত দই স্বাদের এর কারণ কি জানেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বগুড়ার দই এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি
- বগুড়ার দই এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি
- কিভাবে বগুড়ার দইয়ের উৎপত্তি হয়
- কি কি উপাদান দিয়ে বগুড়ার দই তৈরি হয়
- সারা বাংলাদেশে বগুড়ার দইয়ের এমন চাহিদা রয়েছে
- বিদেশে বগুড়ার দইয়ের চাহিদা কেমন
- বগুড়া দিয়ে কোথায় পাবো
- আমাদের শেষ কথা
বগুড়ার দই এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি
দয়ের কথা শুনলেই প্রথমে বগুড়ার কথা ভেসে আসে। একটা কথা প্রচলন আছে দই মানেই বগুড়া। বগুড়া মানেই দই। দই মানে জিভে জল আসার ব্যাপার। গুনে, গন্ধে, স্বাধে ভরপুর এই বগুড়ার দই যে কারোর নজর কাড়তে বাধ্য। কিন্তু কি এমন আছে এই বগুড়ার দইয়ে। বগুড়ার দইয়ের এত জনপ্রিয়তার আসল কারণ হচ্ছে দইয়ের গুণ, গন্ধ ও স্বাদ। বিশেষভাবে এই দই তৈরি করা হয়।
দই বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলার বানালেও বগুড়ার দইয়ের বানানোর প্রক্রিয়া সেই প্রাচীনকাল থেকে ভিন্ন হয়ে আসছে সেগুলো থেকে ভিন্ন মূলত এ কারণেই বগুড়ার দই এত জনপ্রিয়।
আরো পড়ুনঃ জয়পুরহাট থেকে রাজশাহী সকল ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া
কিভাবে বগুড়ার দইয়ের উৎপত্তি হয়
বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস সূচিত হয় ১৯৪৭ সালে। তৎকালীন সময়ে বগুড়ার সনাতন ঘোষ সম্প্রদায়েরা এই দই তৈরি করা শুরু করে। ঘ্রাণ আর স্বাধে কারণে ধীরে ধীরে এই দই তার পরিচিতি লাভ করে। তাদের হাতের জাদুর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে, এই দই দেশজুড়ে তার পরিচিত লাভ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এই দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করে মুগ্ধ হন। এই দইয়ের স্বাদে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে সেসময় বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও নামিদামি লোকেদের এই দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে তাদের আমন্ত্রন করেন।
তারাও এই দই খেয়ে মুগ্ধ হয়। যার ফলে সেসময় থেকেই বগুড়ার দই তার প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে। পূর্বে এটি সনাতনদের হাতে থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা মুসলমানদের হাতে চলে আসে। কারিগর পরিবর্তন হলেও দই বানানোর প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়নি, পূর্বের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুগ যুগ ধরে এই দই তৈরি হয়ে আসছে। বর্তমানে বগুড়া সহ ১২ টি উপজেলায় বগুড়ার দই তৈরি করা হয়।
কি কি উপাদান দিয়ে বগুড়ার দই তৈরি হয়
দই বাংলাদেশের অনেক জেলায় তৈরি করা হয়, কিন্তু বগুড়ার দই এত বিখ্যাত তার কারণ হচ্ছে এর বানানোর প্রক্রিয়ার ধরন। প্রাচীনকাল থেকে যেই সনাতনদের নিয়মে এই দই তৈরি করা হয়। তিনটি উপাদানের সংমিশ্রণে বগুড়ার দই তৈরি করা হয় সেই উপাদান তিনটি হল ঃ
- বিশুদ্ধ খাঁটি গরুর
- দুধ চিনি বা গুড় গু
- আগে থেকে বানানো টক দই
বিশুদ্ধ খাঁটি গরুর দুধঃ প্রথমে গরু থেকে বিশুদ্ধ খাঁটি গরুর দুধ সংগ্রহ করা হয়, পরে সেই দুধ দীর্ঘক্ষন সময় ধরে জাল করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে জাল করার পর দুধ যখন ঘন হয়ে আসে তখন
গুড় বা চিনি মেশানোঃ ব্রাউন কালারের চিনি অথবা খেজুরের রসের বা আখের রস দিয়ে বানানো গুড় দুধের সাথে মেশানো হয়, দইয়ে মিষ্টি ভাব আনার জন্য। এরপর
টক দই মিশানোঃ দই ব্যবসায়ীরা উক্ত কাজগুলো করার আগে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে টক দই বানিয়ে রাখে সেই টক দই চিনি মেশানো দুধে মিশিয়ে দেয়। কারণ টক দই না দিলে দই তৈরি হবে না। এরপর তারা প্লেটের মত আকৃতির মাটির পাত্রে দই রেখে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়, দই জমাট বাঁধার জন্য। প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা রেখে দেওয়ার পর দই সম্পূর্ণ জমাট বেঁধে গেলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে প্রায় যায়।
আরো পড়ুনঃ পোড়াদহ থেকে রাজশাহী সকল ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া
সারা বাংলাদেশে বগুড়ার দইয়ের কেমন চাহিদা রয়েছে
দই বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাতেই তৈরি করে, কিন্তু বগুড়ার দইয়ের মত দই তৈরি করতে পারেনা। স্বাদ, গন্ধ আর গুনাগুনের দিক থেকে বগুড়ার দই আর বাকি সব জেলা থেকে ভিন্ন। তাই পুরো বাংলাদেশে এই দইয়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গবেষণা দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকারও বেশি বগুড়ার দই কেনাবেচা হয়। এ থেকে বোঝা যায় পুরো বাংলাদেশে বগুড়ার দইয়ের কি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিদেশে বগুড়ার দইয়ের চাহিদা কেমন
শুধু বাংলাদেশের নয় বগুড়ার দইয়ের চাহিদা রয়েছে দেশের বাইরেও। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিদেশীদের এই দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন, এরপর থেকেই এই দই দেশের বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব পর্যটকরা ঘুরতে আসে তারা এসে বগুড়ার স্বাদ গ্রহণ করে মুগ্ধ হয়ে যায়।
তারা সাথে করে নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য। এছাড়াও দেশের বাইরে বাংলাদেশে যেসব প্রবাসীরা আছে তারাও চাই এই দইয়ের স্বাদ নিতে। কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর হলে বগুড়া দই দেশের বাইরে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। রপ্তানি করা হলে বিদেশিদের ও দেশের বাইরের প্রবাসীদের বগুড়ার দইয়ের চাহিদা পূরন হবে।এর ফলে বগুড়া দই আরও সুনাম অর্জন করবে পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও দেশ লাভবান হবে।
বগুড়ার দই কোথায় পাবো
যেহেতু বগুড়ার দই বগুড়াতে তৈরি হয় তাই সেখানে গেলে সবচেয়ে ভালো মানের দই কিনতে পারবেন। বগুড়ার দই নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইটস অথবা মরহুম আলী দই ঘরে। এছাড়াও বগুড়ার সাতমাথায় নাম না জানা বেশ কিছু দোকান রয়েছে যেখানে খাঁটি দই পাবেন। আপনার বাসা যদি বগুড়া থেকে দূরে হয় অথবা বগুড়ায় গিয়ে দই কিনা সম্ভব না হয় তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে বগুড়ার দই অর্ডার করতে পারেন। কুরিয়ার সার্ভিসে পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে প্রতারক হতে সাবধান থাকতে হবে। এছাড়াও আপনার নিকটস্থ বিশ্বস্ত বড় কোন দই-মিষ্টির দোকানে খোঁজ নিতে পারেন সেখানে এই দই পাওয়া যেতে পারে, কারণ পুরো বাংলাদেশ ব্যাপী এই দই সরবরাহ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের শেষ কথা
১৯৪৭ সালে তৎকালীন সনাতন ঘোষ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বগুড়ার দই সেই থেকেই জনপ্রিয়। সে থেকেই এই দই তার জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেই ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে যুগ যুগ ধরে এই বগুড়ার দই তৈরি হয়ে আসছে যেটা এখন বর্তমানে মুসলমানরা এই দই তৈরি করছে। পূর্বের প্রচলিত নিয়ম মেনেই দুধ চিনি আর টক দইয়ের সংমিশ্রণে বিশেষ কারিগর দ্বারা এই দই তৈরি হয়ে আসছে যার গুনাগুন গন্ধ আর স্বাধে মানুষ মুগ্ধ। বগুড়ার দইয়ের বাংলাদেশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এছাড়াও দেশের বাইরেও এই দই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, আগামীতে এই দই বিদেশে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বগুড়ার দই নিতে হলে আপনাকে বগুড়া যেতে হবে অথবা কুরিয়ার সার্ভিসে অর্ডার করতে পারেন এছাড়াও নিকটস্থ বড় দই মিষ্টির দোকানে পাওয়া যাবে। পরিশেষে বলা যায় বগুড়ার দইয়ের স্বাধে মানুষ মুগ্ধ তাইতো এই দই এত জনপ্রিয়। এটা বাংলাদেশের একটা সম্পদ। ধন্যবাদ।
মনের লিফ্ট ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url